দিল্লি-এনসিআর-এ বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক এখন সুপ্রিম কোর্টের নজরে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ২০২৪ সালে ৩৭ লক্ষেরও বেশি কুকুরের কামড়ের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২৫,০০০-এরও বেশি ঘটনা কেবল দিল্লিতেই। ছোট শিশু, বৃদ্ধ এবং গৃহহীন মানুষ সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে জলাতঙ্কের অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু। এমন পরিস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্ট এখন বিলম্ব না করে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে যে দিল্লি থেকে ফরিদাবাদ পর্যন্ত সমস্ত পৌর সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে একটি অভিযান শুরু করতে হবে এবং প্রথমে সংবেদনশীল এলাকা থেকে কুকুর অপসারণ করতে হবে। আট সপ্তাহের মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, সিসিটিভি স্থাপন এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের নির্দেশও জারি করা হয়েছে। এখন আর কোনও আটক কুকুরকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হবে না।
মানুষ এবং কুকুর উভয়ের জীবনের জন্যই বিপদ: আদালত পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুতর বলে অভিহিত করেছে। মাত্র এক বছরে ৩৭ লক্ষেরও বেশি কুকুরের কামড়ের ঘটনা নথিভুক্ত হওয়া একটি সতর্কবার্তা। ছোট শিশু, বৃদ্ধ এবং দরিদ্র গৃহহীন মানুষরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি জলাতঙ্ক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং সময়মতো টিকা না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন।
বেড়া কুকুরদের অবিলম্বে ধরা হবে: দিল্লি, এমসিডি, এনডিএমসি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রাম এবং ফরিদাবাদকে অবিলম্বে বেড়া কুকুর ধরা শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, যেসব জায়গায় কুকুরের আক্রমণের ঘটনা বেশি, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পৃথক দল গঠন করা হবে।
রাস্তায় ফেরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা: আদালত সতর্ক করে দিয়েছে যে একবার কুকুর ধরা পড়লে, তাকে আর কখনও রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হবে না। যদি এমনটি ঘটে, তাহলে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আট সপ্তাহের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত: আট সপ্তাহের মধ্যে এনসিআরের সমস্ত শহরে আশ্রয়কেন্দ্র বা পাউন্ড তৈরি করা হবে। এই জায়গাগুলিতে পর্যাপ্ত জায়গা, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং পশুচিকিৎসা সুবিধা থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরাও স্থাপন করা হবে যাতে কোনও কুকুর অবৈধভাবে ছেড়ে না দেওয়া যায়।
আশ্রয়কেন্দ্রে মানবতা এবং যত্ন: আদালত বলেছে যে কোনও কুকুরের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা উচিত নয়। তাদের ভিড় থেকে রক্ষা করা উচিত, সময়মতো খাবার এবং চিকিৎসা দেওয়া উচিত। দুর্বল এবং অসুস্থ কুকুরকে আলাদা রাখা উচিত। কমপক্ষে দুজন দায়িত্বশীল কর্মচারী সর্বদা উপস্থিত থাকতে হবে।
দত্তক গ্রহণ অনুমোদিত কিন্তু কঠোর শর্ত সহ: দত্তক গ্রহণ সম্ভব, তবে কঠোর নিয়ম সহ। কোনও দত্তক নেওয়া কুকুরকে আবার রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হবে না। যারা নিয়ম ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জীবাণুমুক্তকরণ এবং টিকাদান একসাথে: আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি, জীবাণুমুক্তকরণ, কৃমিনাশক এবং টিকাদানও করা হবে। কর্মকর্তারা আর এই অজুহাত দেখাতে পারবেন না যে তারা সুবিধাগুলি তৈরির জন্য অপেক্ষা করছেন।
হেল্পলাইন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা: এক সপ্তাহের মধ্যে হেল্পলাইনটি শুরু হবে। কুকুরের কামড়ের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই, চার ঘন্টার মধ্যে কুকুরটিকে ধরা হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হবে।
জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে: দিল্লি সরকারকে প্রতি মাসে চিকিৎসা করা মানুষের প্রাপ্যতা, মজুদ এবং সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। প্রকৃত ভ্যাকসিনের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টেও হাইকোর্টের মামলা: দিল্লি হাইকোর্টে কুকুরের আশ্রয়স্থল নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন ছিল, যা এখন সুপ্রিম কোর্টে আনা হবে এবং এই মামলার সাথে শুনানি করা হবে।
No comments:
Post a Comment